About
জানার জন্য ছুটে চলা
এইতো কয়েক বছর আগে ইটালির মনজা নগরীর নগর
পরিষদ ঘোষণা করলেন, গোলাকার পাত্রে গোল্ড ফিস রাখা যাবেনা । তাদের এই সিদ্ধান্তের
যুক্তি ছিল, গোলাকার পাত্রে গোল্ড ফিস রাখা একটা নিষ্ঠুরতা । কারণ এতে গোল্ড ফিস
বাইরে তাকালে বাইরের জগতের একটা বিকৃত রূপ দেখতে পায় । গোলাকার পাত্রটি একটি বিশাল
ফোকাসের অবতল লেন্সের মত তার বাইরের জগতটি বিকৃত করে তার কাছে প্রদর্শন করে । আমরা
বাইরের জগতে যা কিছু দেখছি, গোল্ড ফিস তা দেখার সুযোগ পাচ্ছেনা, তাই এটিকে আমরা
নিষ্ঠুরতা মনে করি । কিন্তু আমরা যে
জগতকে দেখছি, তার সত্যতা কতটুকু ? কোথাও এমনটা নয়তো, যে আমরাও একটা বিশাল গোল্ড
ফিসের পাত্র বা ভিন্ন কোন আকৃতির পাত্রে আছি ? আর আমাদের দৃষ্টিও সেই পাত্রের
লেন্স সরূপ আচরণের জন্য বিকৃত হচ্ছে ? আমরা যা দেখছি, বাস্তব চিত্র তার থেকে আলাদা
? গোল্ড ফিস যেমন যা দেখে, বাস্তব জগত তার থেকে আলাদা ঠিক তেমনটাই ?
যদি এমনটা সত্য হয় তবে কিভাবে আমরা
নিশ্চিত হবো, গোল্ড ফিসের পাত্রে অবস্থান করে আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব তাই ঠিক বা
তাই পরম হবে । অথবা আমরা যদি কোন পরম তত্ত্ব বা যুক্তি পেয়েও যাই, তা তো এই গোল্ড
ফিসের পাত্রের বাইরের জন্য নাও প্রযোজ্য হতে পারে । সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের অস্তিত্বের
পরম সত্য খোঁজার আগে নিজেদের অস্তিত্বের বিস্তার সুবিশাল করে সত্য খোঁজা আবশ্যক । যদি
তা করতে পারি, তবেই হয়তো আমরা আমাদের অস্তিত্বকে জানতে পারব । অথবা নতুন কোন
প্রশ্ন এসে আমাদের এই অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে । তবুও জীবনকে জানতেই আমাদের এই
নিরলস ছুটে চলা।
এই সত্যকে খুজতে আমাদের মাঝে জন্ম নেবে,
আরও হাজারো আইনস্টাইন, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, স্টিফেন ডব্লিউ হকিংস । সেই সত্য
প্রতিষ্ঠার জন্য জন্ম নেবে শত শত বেপরোয়া জিওর্দানো ব্রুনো । কারণ বিজ্ঞানেই আছে
আমাদের বিশ্বাস আর মুক্তির রহস্য । তাইতো আমরা ঘুমাইনা, জেগে থাকি-জানার নেশায়,
আবিষ্কারের আশায় ।
কিছু কথা
সময়ের
সাথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সে গতির ধারক
এবং বাহক হিসেবে স্বীকৃত । সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলা
এখন প্রতিটি দেশের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ । কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি, সেই
প্রতিযোগিতায় আমাদের অবস্থান কিংবা অগ্রগতি কোথায় । স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে
যাচ্ছে । এর মাঝে আমরা অনেক সফলতা দেখিয়েছি । বীরত্ব দেখিয়েছি অনেক । কিন্তু
আমাদের প্রযুক্তি খ্যাতের অবস্থান কোথায় ? চীন, জাপান, রাশিয়া কিংবা ভারতের
মানদণ্ডে আমরা কয়েক গুণ পিছিয়ে । এ নিশ্চয়ই আমাদের ভাগ্য নয় । এ আমাদের নিজেদের
ব্যার্থতা । ভাগ্যের উপর ছেড়ে তখন দিতে পারতাম, যখন দেখতাম আমাদের দেশে মেধা নেই
কিংবা মেধা তৈরি হচ্ছেনা । কিন্তু এমনটা তো নয় । আমাদের মেধাবীরা ঠিকই সফলতা
দেখিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে সুউচ্চ অবস্থানে । আর কিছু অগোচরেই পড়ে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে
। আপনি হয়তো ভাবছেন, দেশেরে সিস্টেমের সমস্যা । না, এ আমাদের একান্তই ব্যাক্তিগত
ব্যার্থতা । বিল গেটস, মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ জবস যখন সফলতার সুউচ্চ অবস্থানের
দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলেন, তাদের কি প্রতিবন্ধকতা ছিলনা ? ছিল । বরং আমাদের তুলনায়
অনেক বেশিই ছিল । তারা যদি সেই প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে ফেলে সফলতায় রাজত্ব করতে পারে,
তবে আমরা কেন পারবনা । আমাদের ঘাটতি কোথায় ? প্রকৃত সত্য এটাই, তাদের মত ত্যাগ, শ্রম
এবং অধ্যয়নের মানসিকতা এবং প্রয়োগ আমাদের নেই । একদমই যে নেই, তা নয় । কিছু
থাকলেও, পরিবেশ এবং পরিস্থিতি তাদেরকে হয়তো উঠে দাঁড়াতে দিচ্ছেনা । তবুও আমরা
সেটাকে তাদের তাদের ব্যাক্তিগত ব্যার্থতা স্বীকার করব । প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম
করাই জীবনের প্রকৃত অর্থ বহন করে । তবে এক্ষেত্রে আরও একটি প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে,
আমরা যে বিজ্ঞান অধ্যয়ন করছি, তা আমাদের মাতৃভাষায় না হওয়ায় আমাদের বোধগম্যতা,
চিন্তা এবং ধারণক্ষমতার মধ্যে ঘাটতি থেকে যায় । এই প্রতিবন্ধকতাকে অবশ্যই আমাদের
অতিক্রম করতে হবে ।
ব্যাসেট কেন
আমরা মনে করি, গ্রন্থ গত বিদ্যার গণ্ডি পেড়িয়ে যেদিন আমরা আমাদের চিন্তা দিয়েই নিজেদের
চিন্তাকে উপলব্ধি করতে পারব, যেদিন আমরা সামান্য একটা সার্টিফিকেট পাবার আশায়
মুখস্থ বিদ্যায় আমাদের মেধাকে ড্রেনে না ফেলে চিন্তা ও অধ্যয়ন এবং এর মাধ্যমে
অর্জিত মেধা দিয়ে জীবন, দেশ, জাতী এবং জগৎকে নিয়ে চিন্তা করব সেদিনই আমরা অসাধ্য সাধন করতে পারব । টাইম
মেশিন হয়ত আমরা তৈরি করতে পারবনা । কিন্তু সংক্ষিপ্ত এই জীবনেই আমরা সহস্র বছরের
ইতিহাস রচনা করতে পারব । আমাদের বাম হাত এবং ডান হাতের মধ্যে গঠনগত কোন পার্থক্য
না থাকা সত্ত্বেও যেমন শুধু অনুশীলনের কারণেই আমরা ডান হাতে বেশি শক্তি পাই, তেমনি বেশি বা কম মেধা
বলতে কিছু নেই যা আছে, তা শুধু অধ্যয়ন ।
সেই লক্ষ্যে সময়ের সাথে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ব্যাসেটের পথচলা । বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তিবিদ্যায় আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ
সর্বস্তরে সকল আগ্রহী এবং উদ্যমী এক দল তরুণ তরুণীদের নিজ মেধাকে বিকশিত করার
সুযোগ প্রদান পূর্বক মেধার সার্বিক উন্নতি সাধন করে দেশের বিজ্ঞান এবং
প্রযুক্তিবিদ্যার টেকশই উন্নয়ন অর্জন করার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে অধিকতর
উন্নয়ন প্রদানই আমাদের লক্ষ্য ।
বিজ্ঞান যেমন আমাদের গুহা থেকে তুলে এনে দিয়েছে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য এবং
স্বকীয়তা । তেমনি আমাদের মুক্তি এবং স্বকীয়তা দিতে পারে বিজ্ঞান । তাই চিন্তা হোক
আমাদের এই বিজ্ঞান বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি এবং উদ্ভাবনা হোক আমাদের হাতিয়ার ।
ব্যাসেট কি ??
The Bengali Association of Science Engineering and Technology.(BASET) প্রথমত বাংলা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায়
বিজ্ঞান চর্চার লক্ষ্যমাত্রাই যার প্রেরণা।
ব্যাসেটের লক্ষ্য
দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরে সকল
আগ্রহী এবং উদ্যমী এক দল তরুণ তরুণীদের নিজ মেধাকে বিকশিত করার সুযোগ প্রদান
পূর্বক মেধার সার্বিক উন্নতি সাধন করে দেশের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যার টেকশই
উন্নয়ন অর্জন করার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে অধিকতর উন্নত এবং আদর্শ প্রজন্ম
প্রদানই আমাদের লক্ষ্য ।
ব্যাসেটের উদ্দেশ্য
দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরে সকল আগ্রহী এবং উদ্যমী তরুণ
তরুণীদের নিয়ে কার্যকর অধ্যয়ন এবং আর্টিকেল লেখন, প্রকাশনা, প্রোজেক্ট তৈরি এবং বাস্তবিক জীবনে তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করে দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি সাধন করে, দেশ গড়ার
কারিগর হিসেবে তরুণ সমাজকে যোগ্য করে গড়ে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য ।
বিজ্ঞানভিত্তিক আর্টিকেল বাংলায় লেখনী এবং প্রকাশের মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক মৌলিক চিন্তা চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষার মান বাড়ানো ।- আর্টিকেলের সংখ্যা এবং মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি দুই মাস অন্তর ব্যাসেটের ম্যাগাজিন প্রকাশ ।
- বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি তিনটি শাখায় ম্যাগাজিনের লেখনী প্রকাশ ।
- ম্যাগাজিনে সর্বাধিক এবং সর্বোচ্চ মান সম্মত আর্টিকেল লেখককে পুরস্কৃত করা।
- দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ করে তাদেরকে প্রশিক্ষণ প্রদান পূর্বক আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের জন্য ওয়ার্কশপের আয়োজন, সার্বক্ষনিক সহযোগিতা প্রদান পূর্বক অভ্যন্তরীণ এবং বহিস্থ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে মেধাবী এবং উদ্যমী ছাত্রছাত্রীদের খুজে বের করে উচ্চতর চিন্তা এবং গবেষণার মাধ্যমে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে সমৃদ্ধ করা ।
-আলবার্ট আইনস্টাইন
No comments
New comments are not allowed.